বুধবার , 15 জানুয়ারি 2025 |
  1. অপরাধ
  2. আজকের টাকার রেট
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আমার দেশ
  5. খেলাধুলা
  6. চাকরী
  7. জাতীয়
  8. জীবনযাপন
  9. টাকার রেট
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. তারিখ
  12. নামের অর্থ
  13. প্রবাস
  14. বাণিজ্য
  15. বিনোদন

ডোনাল্ড ট্রাম্প, দাবানল ও ‘শয়তান বাতাস’

প্রতিবেদক
আজকের আপডেট স্টাফ

সর্বশেষ হালনাগাদ: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫ ৮:০৪ পূর্বাহ্ন

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ২০ জানুয়ারি। ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি আগেই চলে আসবেন। ১৯ জানুয়ারি রাজধানীতে র‍্যালি করবেন। হোয়াইট হাউসে তার অভিষেকের আয়োজন চলছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কারও মনোযোগ নেই সেদিকে। মাতামাতি শুধু লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল ও ‘ডেভিল উইন্ডস’ বা ‘শয়তান বাতাস’ নিয়ে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বয়ং দাবানল নিয়ে কথা বলছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর তাকে লস অ্যাঞ্জেলেসে পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি গভর্নর এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে দাবানল নিয়ে উল্টো আক্রমণ করলেন। ট্রাম্পের মতে, ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতাই নাকি দাবানল পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। তার অভিযোগ, গভর্নর গ্যাভিন নিউজম লস অ্যাঞ্জেলেসে পানির সংকট তৈরি করেছেন।

কারণ রিজার্ভারগুলোয় পানি ছিল না। দমকলকর্মীরা পানি ব্যবহার করতে পারেননি। পানি না থাকায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। গ্যাভিন নিউজম একজন ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ। গত রোববার ভোরে আমাদের উড়োজাহাজ ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে পৌঁছাতেই পাইলট ঘোষণা করলেন যাত্রীরা যেন মাস্ক ব্যবহার করেন।

কারণ ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশ বিষাক্ত বায়ুতে ভরপুর হয়ে গেছে। দাবানলের কারণে ধোঁয়া ও ক্ষুদ্র বস্তুকণায় প্রচণ্ড ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীরা যেন নিরাপদে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেন, সে জন্যই সতর্ক করে দেন পাইলট।

ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছে এর আলামত লক্ষ করলাম। সেই ঝকঝকে রোদ নেই। ওয়াশিংটন থেকে কয়েকজন আত্মীয় ফোন করেও দাবানল বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। মন্টগোমারি কলেজের এডজাংক্ট প্রফেসর ড. শোয়েব চৌধুরী, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে স্মৃতিশক্তি বিষয়ে গবেষক ছিলেন।

তিনি বলেন, কী উদ্ভূত আবহাওয়া। ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়ায় বরফ পড়ছে আর ক্যালিয়োর্নিয়ায় দাবানল। এই দাবানলের সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়া ও ক্ষুদ্র বস্তুকণায় বাসিন্দাদের অনেক দিন ঝুঁকিতে থাকতে হবে।

৯ জানুয়ারি দাবানলের সৃষ্টি। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালিসেডস, ইটন ও হার্স্ট কাউন্টি এলাকাজুড়ে দাবানলের বিস্তার। এই দাবানলে নয়ন-জুড়ানো লস অ্যাঞ্জেলেস আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে জ্বলছে আর জ্বলছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে এ রকম দাবানল আর একটিও ঘটেনি। আগ্রাসী আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে পুরো এলাকার ১২ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি ও অন্যান্য অবকাঠামো। দাবানল পুরো লস অ্যাঞ্জেলেস নগরীকে তছনছ করে দিয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস ও এনবিসি নিউজের খবরে বলা হয়, এক লাখ বাসিন্দাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া গেছে। আরও ৮৭ হাজার বাসিন্দাকে যেকোনো সময় সারিয়ে নেওয়া হতে পারে- সেই সতর্কতা জারি হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, প্রায় ৩৮ হাজার একর পাহাড়ি এলাকা অর্থাৎ ৬০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে দাবানল দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। প্যালিসেডস ইটন ও হার্স্ট এলাকায় হয়েছে এই ক্ষয়ক্ষতি।

দাবানল বিধ্বস্ত এলাকার আয়তন প্যারিসের আয়তনের চেয়েও বড়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রধান ক্রিস্টেন ক্রাউলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ১৪ হাজার অগ্নিনির্বাপককর্মী কাজ করছেন।

বিমান, এয়ার ট্যাংকার ও হেলিকপ্টার দিয়ে অগ্নিনির্বাপক রাসায়নিক প্রতিরোধক ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে বিমানের সংখ্যা ৮৪টি এবং হেলিকপ্টার ৩১টি। ১ হাজার ৩৫৪টি ফায়ার ইঞ্জিনও কাজ করছে। মেক্সিকো থেকেও দমকলকর্মীদের আনা হয়েছে।

কিন্তু কিছুতেই দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত মাত্র প্যালিসেডসের ১৪ এবং ইটনের ২৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনাও একই তথ্য দিয়েছেন। তার মতে, দানবীয় দাবানলের বিরুদ্ধে আমরা এক যুদ্ধে আছি।
এক সপ্তাহ ধরে এই দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেসকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

সোমবার পর্যন্ত ২৫ জন মারা গেছে। ২৯ জন নিখোঁজ। আকর্ষণীয় সিনেমাপাড়া লস লস অ্যাঞ্জেলেস হলিউডও হুমকিতে আছে। হলিউডের অনেক সেলিব্রিটির বাড়িঘরও পুড়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন কৌতুক অভিনেতা ভিলিক্রিস্টাল, প্রিন্সেস ব্রাইট অভিনেতা কেরি অ্যালওয়েজ, জেমস উডস, অ্যান্থনি হপকিংস, মেল গিবসন, পেরিস হিলটন প্রমুখ ।

এই তীব্র দাবানলের কারণ কী? বিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এ জন্য শক্তিশালী ‘সান্তা আনা বাতাস” এবং ‘হাইড্রোক্লাইমেট হুইপ্ল্যাশ’কে দায়ী করেছেন।

সান্টা আনা বাতাসকে ‘ডেভিল উইন্ডস’ বলা হচ্ছে। অর্থাৎ শয়তান বাতাস। এই শক্তিশালী বাতাস শুষ্ক, উষ্ণ ঝড়োবাতাস। উচ্চচাপ বায়ু যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে গ্রেট বেসিন এলাকা, যা মূলত নেভাডা, ইউটাহ, আইডাহো ও দক্ষিণ-পূর্ব ওরেগনের উসর মরুভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়।

সান্টা আনা বাতাস শুধু দাবানলকেই ছড়িয়ে দেয় না, ধ্বংসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ঘণ্টায় সাধারণ ৬০ থেকে ৮০ মাইল বেগে অর্থাৎ ঘণ্টার ৯৫ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়। এবার ক্যালিফোর্নিয়ায় এই শয়তান বাতাস ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগেও প্রবাহিত হয়েছে।

এর নাম সান্টা আনা হওয়ার কারণ হচ্ছে এই বাতাস দক্ষিণ ক্যালিয়োর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির সান্তা আনা গিরি খাত থেকে এসেছে। এই বাতাস উচ্চ বেগে প্রবাহিত হওয়ায় গাছপালা, বনের আর্দ্রতা, তথা পানি উড়িয়ে এনে গাছপালা পরিণত হয় জ্বালানিতে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস ঘোষণা করেছে, সোমবার গভীর রাত থেকে শয়তান বাতাস বা লাল বায়ু আজ বুধবার পর্যন্ত তিন দিন বয়ে যাবে।

এ জন্য দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পুরো এলাকায় লাল পতাকা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ফলে দাবানল নিয়ে নতুন করে আবারও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক নেচার ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে ১৯৮৩ সাল থেকে দাবানল ক্রমাগতহারে বাড়ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে ২০২৪ সালের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এরপর আর বৃষ্টির দেখা নেই। গত এক বছরে ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে এক ইঞ্চি বৃষ্টিও হয়নি।

অথচ গড়ে চার ইঞ্চি বৃষ্টি হওয়ার কথা। এর ফলে যেসব গাছপালা এর আগে জন্মেছে, সেসব গাছপালা শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে জ্বালানিতে পরিণত হয়েছে। এটাই ‘হাইড্রোক্লাইমেট হুইপ্ল্যাশ’। শয়তান বাতাস ও হাইড্রোক্লাইমেট হুইপ্ল্যাশের কারণে শুষ্ক গাছপালার অঙ্গার বা স্ফুলিঙ্গ চারপাশে উড়ে বনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।

ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ দাবানল। এ জন্য বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের রাতের আকাশ আগুনের লেলিহান শিখায় লাল হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিমান, হেলিকপ্টার ও এয়ার ট্যাংকারগুলো হাজার হাজার গ্যালন রিটারডেন্ট ফেলছে।

একটি বড় ট্যাংকার ৯ হাজার ৪০০ গ্যালন পর্যন্ত অগ্নিপ্রতিরোধক এই রিটারডেন্ট দাবানলে ফেলছে। রাসায়নিক এই অগ্নিপ্রতিরোধ পানি ও সারের মিশ্রণ। এটা আগুনে ফেললে অদাহ্য কার্বন উপাদান তৈরি করে। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। একইভাবে গ্যালন গ্যালন পানিও ফেলা হচ্ছে দাবানলে। কখন এই দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসবে, সেটাই এখন ক্যালিফোর্নিয়াবাসী প্রশ্ন ।

আমার দেশ: সৈয়দ আবদাল আহমদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে

সর্বশেষ - সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়সূচী